চট্টগ্রামে এসে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন মামলার বাদী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে বাবুল আক্তার কথা বলেন।
দুপুর ১২টার পর তিনি কার্যালয় ছেড়ে যান।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘বাবুল আক্তার আকস্মিকভাবে বৃহস্পতিবার সকালে আমার কার্যালয়ে হাজির হন। এরপর মিতু হত্যা মামলার বিষয়ে বাদী হিসেবে তাঁর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ হয়েছে। ’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আলাপকালে স্ত্রী নিহতের ঘটনায় শোকাহত হয়ে তিনি অনেকক্ষণ কান্না করেছেন। ’
স্ত্রী হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত উপকমিশনার বলেন, ‘মামলার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ হয়েছে। বাদী হিসেবে তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেই পারেন। এ ছাড়া বাদীরও বক্তব্য থাকে। তা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে শুনতে হয়। ’ তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘বাদীর কাছে মামলার বিষয়ে কিছু তথ্য জানার ছিল। এসব তথ্য জানতে আমি তাঁকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য মৌখিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আমার কার্যালয়ে এসেছেন। আমার কিছু প্রশ্ন জানার ছিল, আমি সেসব প্রশ্নের উত্তর তাঁর কাছ থেকে জানতে চেয়েছি। ’
গত ৫ জুন সকালে নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় সন্তানের সামনে নৃশংসভাবে খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। ঘটনার পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্ত পর্যায়ে তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি বলে এর আগে তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল।
মামলার তদন্ত পর্যায়ে বাবুল আক্তার নিজে স্ত্রীর খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত মর্মে নানাভাবে ইঙ্গিত দিয়েছিল পুলিশ। এর জের ধরে গত ২৪ জুন রাতে বাবুল আক্তারকে ঢাকার গোয়েন্দা কার্যালয়ে ১৫ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই সময় তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। পরে বাবুল আক্তার পুলিশ বাহিনী থেকে অব্যাহতি নেন।
প্রসঙ্গত, দেশজুড়ে আলোচিত মিতু হত্যাকাণ্ডের পর আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার পুলিশ বাহিনী থেকে অবসরে যান। এর ফলে মিতু হত্যাকাণ্ডের আলোচনা ছাপিয়ে প্রাধান্য পায় বাবুল আক্তারের পদত্যাগ। এ ছাড়া বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি মুছা সিকদার ‘রহস্যজনক’ নিখোঁজ আছেন। যদিও মুছা সিকদারের পরিবারের দাবি, মুছাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। এ ছাড়া আরো দুজন আসামি পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে।
এক সময়ের কর্মস্থলে এসেও চুপ বাবুল : পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার আগে নগর গোয়েন্দা কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপকমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। এক সময়ের পরিচিত কর্মস্থলে এসে তাঁর অনেক পরিচিত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা হয়। কিন্তু তিনি নীরব ছিলেন বা পরিচিতজনদের সঙ্গে কথা না বলেই গোয়েন্দা কার্যালয় ত্যাগ করেন। এক সময় গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিজের কক্ষ ছিল, দুটি কক্ষ নিজেই সাজিয়েছিলেন বাবুল আক্তার। সেই কক্ষের দিকেও উঁকি দেননি বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রস্তাবেও সাড়া দেননি বাবুল আক্তার। তিনি পরবর্তী সময়ে আবার আসবেন বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামানকে।